বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১২

ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা ॥ ডেভেলপার কোম্পানীর অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী

॥ এম. সেলিম ॥কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিত ভাবে শতশত দালানকোঠা নির্মাণের মহোৎসব চলছে। এক শ্রেণীর অবৈধ দখলদার চক্রের যোগসাজসে পরিবেশ আইন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নামসর্বস্ব শতাধিক ডেভেলপার কোম্পানী ব্যাঙের ছাতার মত এসব অপরিকল্পিত দালান কোঠা নির্মাণের মহোৎসবে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় এসব কোম্পানীগুলো গ্রাহকদের চোখে ধুলো দেয়ার জন্য স্বনামধন্য ব্যক্তি, এমপি, মন্ত্রীদের ম্যানেজ করে তাদের দিয়ে প্রকল্পের কাজ উদ্ধোধন করাচ্ছেন। এসব ডেভেলপমেন্ট কোম্পানীগুলো সরকারী খাস জমি, বিরোধপূর্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ও নির্বিচারে পাহাড় কেটে সমতল করে এসব ভবন নির্মাণ করে চলেছে। এমনকি সরকার কর্তৃক লীজ বাতিল করা প্লটগুলোতেও আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে দালান নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একে একে ভবন ধ্বসের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও সেদিকে ভ্রুপে করছে না অধিকাংশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানীগুলো।
    পর্যটনের উন্নয়নের সাথে সাথে কক্সবাজারের জমির মূল্য হু হু করে বাড়তে থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর ভুয়া দলিল সৃজনকারী ঠকবাজ চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন স্থানের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে এনে বিরোধপূর্ণ জমি দখলের ব্যবসায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দখল-বেদখলের ঘটনা নিয়ে প্রতিনিয়ত হামলা-মামলা, পাল্টা মামলাসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে প্রশাসনও আইন শৃংখলা রায় হিমশিম খাচ্ছে। জানা যায়, পরিবেশ সংরণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা (৫) অনুযায়ী তৎকালীন সরকার কক্সবাজারের সৈকত সংলগ্ন এলাকাকে পরিবেশগত কারণে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরিবেশ আইনকে উপো করে ২০০৩ সালে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ১৩০ একর সরকারী খাস জমি অন্তর্ভূক্ত করে হোটেল-মোটেল জোন গড়ে তোলে এবং প্লট তৈরি করে তা বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বরাদ্দও দেয়া হয়। বর্তমানে পর্যটন ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে নামসর্বস্ব শতশত ডেভেলপার কোম্পানীগুলো কক্সবাজার সৈকত এলাকার মূল্যবান পাহাড় এবং জমির মালিকদের বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে কৌশলে তা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং যত্রতত্র বহুতল দালান নির্মাণ করে পর্যটন নগরীকে ঠেলে দিচ্ছে ভয়াবহ সমূহ বিপর্যয়ের দিকে। কোন রকম সমীা না চালিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এবং খবরের কাগজে ও টিভিতে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাজার হাজার গ্রাহককে চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
    বিশেষজ্ঞদের অভিমত কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় ভূমির গঠন অত্যন্ত নাজুক। ফলে নির্মাণাধীন এসব ভবন যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপরিকল্পিতভাবে এসব ভবন নির্মাণ এক সময় কক্সবাজার বাসীর জন্য কাল হয়ে দাড়াবে। পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক তিসাধন হতে পারে এমন ধারণাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সচেতন মহল। এরপরও অনায়াসে প্রতিদিন হোটেল-মোটেল এলাকাসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে পুরোদস্তুরে। এ সমস্ত কারণে সরকার ঘোষিত ‘এক্সকুসিভ পর্যটন নগরী’ হিসেবে সমুদ্র সৈকতকে গড়ে তোলা কোনভাবেই সম্ভব নয় কারণ একদিকে যত্রতত্র বহুতল নিম্নমানের বহুতল ভবন নির্মাণ, অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করে ভবন নির্মাণ, নকশা অনুমোদন নিলেও তা না মেনে ভবন নির্মাণ, নিম্নমানের কাচামাল দিয়ে ভবন নির্মাণ, নির্মাণকাজে ত্র“টি ইত্যাদি কারণে ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী অনুমোদন ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় নাজুক ভূমির উপর বিশালাকায় ভৌত অবকাঠামো নির্মানে লিপ্ত রয়েছে- গ্রীণ ডেল্টা হাউজিং, আর.এফ বিল্ডার্স, হোম ষ্টোন, হাইপেরিয়ন বিল্ডার্স, এম এন্ড এম বিল্ডার্স, পূবালী প্রপার্টিস, মিশন গ্রুপ, রূপায়ন সিটি, ডায়নামিক ল্যান্ডমার্ক, আইডিয়াল প্রপার্টিস, এনভিল গ্র“প, কোরাল রীফসহ রিহ্যাব মেম্বার বিহীন নামে-বেনামে শতাধিক ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এ ধরণের অপকর্ম চালানোর শত শত অভিযোগ থাকলেও তা সত্য নয় বলে দাবী করছে ডেভেলপার কোম্পানীদের প্রতিনিধিরা। তারা ব্যবসার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র তাদের কাছে রয়েছে বলে দাবী করছে।
১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক আদেশের মাধ্যমে দেশের ৮টি এলাকাকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তন্মধ্যে কক্সবাজার ছিল অন্যতম। এসব নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কারণে কক্সবাজার শহর যতটা ঝুঁকিপূর্ণ তার চেয়ে বেশী শ্রী-হীন হয়ে পড়েছে। এতে নানাভাবে হতাশ হয়ে পড়ছে দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও।

এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...