ঢাকা, ফেব্র“য়ারি ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে আর অভিনয়ের আলো ছড়াবেন না বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। সোমবার সকালে ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন তিনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসায় মারা যান এই অভিনয় শিল্পী। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
বাসার পরিচারক রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফরীদির ঘরে গিয়ে দেখেন তিনি বিছানায় নেই। সাড়াশব্দ না পেয়ে বাথরুমের দড়জা ভেজানো দেখে ভেতরে ঢুকে রুবেল দেখেন ফরীদি ভেতরে পড়ে আছেন।
“আমি উনাকে তুলে শাহীন স্যার আর আমাদের ওপর তলার ডাক্তার সাহেবকে খবর দেই। ডাক্তার সাহেবই জানান, উনি মারা গেছেন।”
ফরীদির ব্যক্তিগত সহকারী এসএম শাহীন জানান, এই অভিনেতা ফুসফুসের জটিলতাসহ আরো কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন সপ্তাহ দুই আগে।
দুপুরে হুমায়ুন ফরীদির বাসভবনের সামনে তার প্রথম জানাজা হয়। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) কার্যালয়ে। সেখান থেকে নেওয়া হয় এফডিসিতে।
এফডিসি থেকে হুমায়ুনের মরদেহ বারডেম হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হবে জানিয়ে শাহীন বলেন, মঙ্গলবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর তার দাফন হবে।
তবে কোথায় তাকে দাফন করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
১৯৫২ সালের ২৯ শে মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফরীদি। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে। তার অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চ নাটক দিয়ে। পরে অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন।
ঊনিশশ আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে কয়েকজন অভিনয় শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে অসম্ভব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন, ফরীদি ছিলেন তাদেরই একজন। ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তকে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়।
নীল নকশার সন্ধানে, দূরবীন দিয়ে দেখুন, ভাঙ্গনের শব্দ শুনিসহ তার অভিনীত বহু নাটক দীর্ঘদিন মনে রাখবে এ দেশের মানুষ।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এই শক্তিমান অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একাত্তরের যিশু, সন্ত্রাস, ব্যাচেলর, জয়যাত্রা ও শ্যামলছায়া অন্যতম।
ফরীদি প্রথমে একটি বিয়ে করলেও পরে অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। তবে ২০০৮ সালে ফরীদি-সুবর্ণার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক কন্যা রয়েছে ফরীদির।
ফরীদির মৃত্যুর খবরে তাৎক্ষণিকভাবে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। নাট্য ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতাদের মধ্যে রামেন্দু মজুমদার, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, হানিফ সংকেত, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, ড. এনামুল হক, এটিএম শামসুজ্জামান, আলমগীর, খলিল, তারিক আনাম, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, তৌকির আহমেদ, বিপাশা হায়াতসহ অনেকেই তার বাড়িতে ছুটে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এই অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এই সময়ের জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নুরুল আলম আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার সঙ্গে গভীর রাতে প্রায়ই টেলিফোনে কথা হতো। ‘প্রতিবারই উনি ফোন রাখার আগে বলতেন, শরীরের যতœ নিস, অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাতে যা।’”
“তার সাথে আর কখনো কথা হবে না”, দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আতিক।