॥ আবদুর রাজ্জাক, মহেশখালী ॥
“মফস্বল সাংবাদিকের জয় হবেই” সাংবাদিক সুমি খানের এই লেখা সাথে আমি ও একমত পোষন করে মফস্বল সাংবাদিকতা নিয়ে দ’ুচার কলম লিখতে বসলাম। আসলে ষাট,সত্তর এমনকি আশির দশক পর্যন্ত ঢাকার বাইরের অর্থাৎ মফস্বলে সাংবাদিকতাকে চিন্তা করা হতো শখের সাংবাদিকতা। এ সময়ে মফস্বলের সচ্ছল পরিবারের তরুণ-যুবক, রাজনৈতিক কর্মী নিতান্ত শখ কিংবা রাজনৈতিক আদর্শের টানে, আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় নিজের সামাজিক সম্মানের জন্য সাংবাদিকতায় আসতেন। অন্য পেশা বা কাজের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন তারা। তখনকার প্রোপটে স্থানীয়ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে ভাবার সুযোগও ছিল না। ফলে সে সময় সাংবাদিকতায় ঝুঁকির মাত্রাও ছিল অপোকৃত কম। মহেশখালী উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক ডাঃ সুলতান উদ্দিন এর মতে একানব্বই পরবর্তী সময়ে সংবাদপত্র জগতে আসে পরিবর্তনের হাওয়া। ১৯৯১ সালে গতানুগতিক ধারার বাইরে শহরের পাশাপাশি মফস্বলেও একদল তরুণ কমিটেড সংবাদকর্মী নিয়ে প্রকাশিত হয় দৈনিক আজকের কাগজ। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ভোরের কাগজ, প্রথম আলো প্রকাশিত হয়। অপরদিকে জনকন্ঠ, ইনকিলাব, ইত্তেফাকসহ অন্যকাগজের সংবাদ চাহিদা, সংবাদ পরিবেশনা এবং মফস্বলে পত্রিকার সার্কুলেশন বৃদ্ধি সব মিলিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকতার চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। তখনও সাংবাদ পরিবেশন স্থানীয় ভাবে পেশা হিসাবে না দাড়ালেও অনেকে মনে করেন মফস্বলে সিরিয়াস সাংবাদিকতার শুরু ওই সময়েই। ফলে মফস্বলে সংবাদের ত্রে যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে সংবাদিকতার ঝুঁকিও। আর নব্বই পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকতার হুমকি-নির্যাতনের মাত্রাও যায় অনেক বেড়ে। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। আর সেই ঝুঁকিটা এখন ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় ভয়াবহ মাত্রায় বেশি। শহরে কাজ করার সুবিধা হলো একটি পত্রিকা বা মিডিয়ায় একসঙ্গে অনেক সাংবাদিক কাজ করেন। একেকজন সাংবাদিক যে যার মতো একেকটি বিট কভার করেন। ফলে নিজস্ব বিটে কাজ করার সময় তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সবকিছুতে অবলম্বন করেন নিজস্ব কৌশল। এছাড়া সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর রিপোর্টের দায় দায়িত্বও চলে যায় সম্পাদক বা পত্রিকার মালিক পরে ওপর। এ েেত্র ুব্ধ শক্তির পে নির্দিষ্ট সাংবাদিককে খুঁজে বের করা কঠিন। ঢাকায় সাংবাদিকের ওপর হুমকি-নির্যাতনের বিষয়টি মোকাবেলা করা হয় অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। শহরের অধিকাংশ মিডিয়া হাউজের প্রভাব বি¯তৃত থাকে সরকার, রাজনীতিবিদ, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই। ফলে শহরের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি মফস্বলের তুলনায় অনেকটা কম। আর শহরের বাইরে উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে ঝুঁকির মধ্যে এবং এেেত্র তারা কতোটা অসহায় তা বোঝা যায় যখন একজন স্থানীয় সাংবাদিক হুমকি-ধমকি, নির্যাতন, মামলা-মোকদ্দমার কবলে পড়েন। প্রকাশিত সংবাদের দায় পত্রিকার হলেও স্থানীয় সংবাদের েেত্র হুমকি-ধমকি, নির্যাতন সবকিছু সামলাতে হয় একা স্থানীয় প্রতিনিধিকেই। মামলায় সম্পাদক, বার্তা সম্পাদককে আসামি করা হলেও অধিকাংশ েেত্র মামলার খরচটুকুও চালাতে হয় ওই স্থানীয় সাংবাদিককেই। অপরদিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কর্মত্রে ওপেন। পুরো উপজেলা জুড়ে বি¯তৃত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে চোখ রাখতে হয় সব কিছুর ওপর, নিভৃত গ্রাম থেকে উপজেলার পুরো কর্মকান্ডের ওপর। নানা কষ্ট, বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সমাজের নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম দুর্নীতিসহ উন্নয়নভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ করে নিজ খরচেই তা পাঠাতে হয় পত্রিকা অফিসে। আর ছাপা হওয়ার পর সংবাদ সংশ্লিষ্ট শক্তির প্রতিক্রিয়া নিয়ে মানসিকভাবে তটস্থ থাকতে হয় তাকে। কারন হুমকি, নির্যাতন নেমে আসেতে পারে যে কোন সময়। এভাবে প্রতিদিনই একজন স্থানীয় সাংবাদিককে থাকতে হয় ঝুঁকির মধ্যে। মাসে দু-চারবার হুমকি-ধমকির শিকার হননি এমন সাংবাদিক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। সন্ত্রাস-অপরাধ, রাজনীতি-দুর্নীতি এ সবকিছুর সংবাদে তিগ্রস্থ হন যারা, তাদের সবাই যে কোনোভাবে শক্তিধর ব্যক্তি। অনেক কিছুই হতে পারে তাদের হাতের ইশারায়, হয়ও। জাতীয় মিডিয়ার সাংবাদিক তো বটেই, স্থানীয় পত্রিকাগুলো আর্থিক ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে দুর্বল থাকায় সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত থাকতে হয় ঝুঁকির মধ্যে।
যেসব স্থানীয় সাংবাদিক এ পর্যন্ত নির্যাতিত হয়েছেন, দেখা যাবে প্রায় সবগুলোতেই রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, গডফাদারের হাত। সন্ত্রাস, অপরপাধ, দুর্নীতি আর রাজনীতির সংবাদ ছাপা হলে হুমকি-ধমকি ছাড়াও রাজনৈতিক নেতারা ওই সাংবাদিকের পেছনে লেলিয়ে দেন পোষা সন্ত্রাসীকে। অনেক সাংবাদিকের একমাত্র পেশা সাংবাদিকতা হলেও উল্লেখ যোগ্য দুই একটি পত্রিকা কিংবা মিডিয়া ছাড়া অধিকাংশ পত্রিকা-মিডিয়া থেকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়না স্থানীয় প্রতিনিধিদের। ফলে আর্থিক কষ্ট অনেক স্থানীয় সাংবাদিকের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে ওঠে।
মফস্বল প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পেলে ঝুঁকি আর শত বাধা-বিপত্তির মাঝেও একজন স্থানীয় সাংবাদিকের পেশাদারিত্ব যেমন বাড়বে তেমনি বাড়তে পারে ওই পত্রিকা-মিডিয়ার ক্রেটিবিলিটিও। অপরদিকে কিছু অপসাংবাদিকের হলুদ সাংবাদিকের কারণে আজ এই মহান পবিত্র পেশা অ-পবিত্র হতে চলেছে। বিশেষ করে পত্রিকার শহর আমাদের কক্সবাজারের বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকায় টাকার বিনিময়ে এমন কিছু ব্যক্তিকে উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে করা হয়েছে যাদের নুন্যতম শিাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণীর নীচে। এ েেত্র যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কোন বাচ বিচার করা হয়নি। ফলে ওই অনভিজ্ঞ প্রতিনিধিরা নেমে পড়ে চাঁদাবাজীতে। তাই আসুন সবাই অপসাংবাদিকতা বন্ধ করে সৎ ভাবে দেশ ও জাতির কল্যানে নিজেরদেরকে আতœনিয়োগ করি। কারণ দেশ ও জাতি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করছে।