শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১২

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা জামাল উদ্দিন গাজী রহ. : নববী আদর্শের প্রতিচ্ছবি

হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর ॥
মৃত্যু অবধারিত সত্য একটি বিষয়। যারাই জন্ম গ্রহণ করে তারা অবশ্যই এ সত্যের মুখোমুখি হতে বাধ্য। এ প্রসঙ্গে আল্ল­াহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন “প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। তবে যুগে যুগে পৃথিবীতে এমন অনেক বুযুর্গানেদ্বীনের আবির্ভাব হয় যাদের ইন্তেকালে সমগ্রজাতি শোকে কাতর হয়ে পড়ে, চোখে অশ্র“র বন্যা বয়ে যায়। এমনকি আসমান-জমিন পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, পশু-পাখি ও সাগর-নদীসহ সমস্ত সৃষ্টি কুলে এসব মাকবুল বান্দাদের বিদায়ে করুণ আহজারীর দৃশ্য পরিলতি হয়; প্রত্যন্ত জনপদে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। প্রায় হককানী ওলামায়ে কেরামের ইন্তেকালে আমরা এমনই দৃশ্য অবলোকন করেছি।  ৭মার্চ, ২০০৯ ইং শনিবার ও ৯মার্চ ২০০৯ ইং সোমবার মাত্র একদিনের ব্যবধানে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান যথাক্রমে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকররমের সাবেক ভারপ্রাপ্ত খতিব ও দীর্ঘদিনের পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি হাফেজ নুর উদ্দিন আহমদ ও উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামী শিা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মুফতি, বাংলাদেশের মুফতিয়ে আজম-আল্লামা মুফতি আহমদুল হক (রহ.)। ইসলামপ্রিয় জনতার অভিভাবকতুল্য এই দুই আলেমে দ্বীনের ইন্তেকালে বিরাজিত শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ৭এপ্রিল ২০০৯ ইং মহান আল্ল­াহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরাপারে চলে গেলেন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ, কুরআন ও হাদীছের অন্যতম বক্তা মাওলানা জামাল উদ্দিন গাজী সন্দীপী (রহ.)। আজ তিনি বিদায় নেওয়ার তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেদিন হযরতের শোক সংবাদ শুনে আমার হৃদয়ে  সৃষ্টি হয়েছিল অন্যরকম এক শোকানুভূতি। যেন কোন নিকটাত্মীয় বা আপনজনকে হারিয়েছি। আসলেও তা-ই। রক্ত সম্পর্কিত কোন আত্মীয় না হলেও হক্কানী আলেমেদ্বীন হিসেবে তিনি ছিলেন আমাদের আত্মার আত্মীয়। অপর দিকে ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিবেদিতপ্রাণ বক্তা হিসেবে রামু কক্সবাজারের প্রায় ইসলামী সম্মেলন, মাদ্রাসার বার্ষিক সভা ও দ্বীনি মাহফিলে অত্যধিক উপস্থিতির কারণে তিনি আমাদের অতি আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। তথাপি অধিকাংশ ইসলামী মাহফিলে উপস্থাপনার দায়িত্ব পালনের সুবাধে হযরতের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সেতু বন্ধন রচিত হয়েছিল। তাই স্বাভাবিক ভাবেই উনার ইন্তেকালে আমি খুব বেশী শোকাভিভূত হয়েছি। কিন্তু তখন আমি  চট্টগ্রামে ৪৫ দিন ব্যাপী একটি প্রশিনোত্তর মূল্যায়ন পরীা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ফলে প্রবল আগ্রহ সত্ত্বেও জানাযায় শরীক হতে না পারার বেদনা এখনও আমাকে ব্যাথাতুর করে তুলে। হযরতের ইন্তেকাল সংবাদ মুহুর্তের মধ্যে  ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সর্বত্র সবদিকে একটি কথাই শুনা যাচ্ছিল,  প্রতিটি নছীহতে কুরআন ও হাদীছের উদ্ধৃতি দিয়ে বয়ানকারী এমন একজন নিষ্টাবান অনলবর্ষী বক্তা আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন। কখনো কি এই শুন্যতা পূরণ হবে? না এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়।
দীর্ঘকাল ব্যাপী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর হাদীসের দরছ দানের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুরআন ও হাদীছের মর্মবাণী সমৃদ্ধ ওয়াজ-নছীহতের মাধ্যমে তিনি আজীবন মানবজাতিকে ইসলামী বিধি-বিধান বাস্তবায়নে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। দ্বীনি মাহফিলে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা মাধূর্যপূর্ণ ভাষায় সুললিত কণ্ঠে কুরআন সুন্নাহর আলোকে অত্যন্ত সাবলিল ভাবে তাকরীর পেশ করতেন। তাঁর বয়ান শোনার জন্য সর্বত্র মানুষের উপচেপড়া ভীড় ল্য করা যেত। তিনি যখন বয়ান করতেন তখন পুরো মাহফিলে নেমে আসত পিনপতন নীরবতা।  তাঁর প্রতিটি নছীহত তৌহিদী জনতার মাঝে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার প্রেরণা সঞ্চার করত। শিরিক-বিদআতের প্রতিরোধ ও সমাজ বিধংসী কুসংস্কার দূরীকরণে তিনি আজীবন অগ্রসেনানীর ভূমিকা পালন করছেন। হযরতের ব্যক্তি চরিত্রে কোন প্রকার লোভ-লালসা, অহংকার ও উগ্রতার স্থান ছিলনা। অতি নম্র, ভদ্র, নিরহংকারী সদালাপী ও সৎ সাহসী আলেমেদ্বীন হিসেবে তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। ছোট-বড়, ধনী-গরীবসহ সকল শ্রেনী-পেশার লোকজনের সাথে প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার ছিল হযরতের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। চলা-ফেরা, আচার-আচরণসহ সামগ্রিক কর্মকান্ডে তিনি  ছিলেন সুন্নাতে নববীর স্বার্থক অনুসারী। এক কথায় বলতে গেলে তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর অনুপম আদর্শের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। দেশ,জাতি ও মুসলিম উম্মাহর করুণ সঙ্কটময় এ পরিস্থিতিতে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করলেন। রেখে গেলেন  তাঁর সফল কর্ম জীবনের অনেক শিনীয় স্মৃতি। এখনো হযরতের কথা বলার বিনয় সূলভ বাচনভংগি আলাপ চারিতার ফাঁকে ফাঁকে মুচকি হাসি, সুন্নাতী পোশাক-পরিচ্ছেদের অতুলনীয় সৌন্দর্য ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিগুলো প্রতি নে  আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কুরআন ও হাদীসের সমন্বয়ে হযরতের ওয়াজ-নছীহতের মধুমাখা সুর যেন বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিশেষত রামু হক লাইব্রেরীর সত্ত্বাধিকারী মাওলানা ডা. শামসুল হকের নামাজে জানাযাপূর্ব বক্তৃতায় মাওলানা জামাল উদ্দিন গাজী সাহেব (রহ.) “কুল্লু নাফসিন যায়িক্বাতুল মাওত” আয়াতটি তলাওয়াত পূর্বক মৃত্যু যে আল্ল­াহ তায়ালার অলংঘনীয় বিধান সে সম্পর্কে যে হৃদয়াগ্রহী নসীহত পেশ করেছিলেন সেই স্মৃতিটিই ঘুরে ফিরে আমার হৃদয়পটে নাড়া দেয়। নসীহত কালে তিনি বলেছিলেন “মাওলানা শামসুল হক সাহেব মৃত্যুর ২ ঘন্টা আগেও সুস্থাবস্থায় চেম্বার করেছেন, হঠাৎ করে তিনি সকলকে কাঁদিয়ে পরাপরে চলে গেলেন, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ এটি আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন নিয়মের ধারাবাহিকতা মাত্র। মৃত্যু এমন একটি হুকুম যা নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগেও হবে না, এক মিনিট বিলম্বেও হবে না, বরং যথাসময়েই প্রত্যেককে এই বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। কেউ আগে কেউবা পরে সকলেই একদিন নশ্বর এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়ে অনন্তকালের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন”। আকস্মিকভাবে ইন্তেকালকারী একজন আলেমেদ্বীনের জানাযাপূর্ব বক্তৃতায় যিনি এত সুন্দর করে কথাগুলো উপস্থাপন করেছিলেন; তিনিও ঠিক একইভাবে বিনামেঘে বজ্রপাতের মত হঠাৎ করে সকলকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে অনন্তজীবনে চলে গেলেন। এই স্মৃতি কখনো ভুলার মত নয়। যা স্মৃতির পাতায় চির অম্লান থাকবে। তাঁর মত একজন দ্বীনের ঝান্ডাবাহী আলেমেদ্বীনকে হারিয়ে জাতি শোকাভিভূত। ইন্তেকালের সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হযরতকে একনজর দেখার জন্য শোকার্ত মানুষের উপচে পড়া ভীড় ও হালিশহর বিডিআর মাঠে লাধিক তৌহিদী জনতার উপস্থিতিতে বিশাল নামাজে জানযাই প্রমাণ করে একজন  উঁচু মাপের আলেমেদ্বীন হিসেবে সর্বস্তরে তাঁর কত ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল।
বহু সৎ গুণের অধিকারী মাওলানা জামাল উদ্দিন গাজী (রহ.) সন্দীপ উপজেলার গাছুয়া গ্রামের মাষ্টার মোবাশশের হোসেনের বড় ছেলে। তিনি সন্দীপ বাউরিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসা হয়ে দেশের সুবৃহৎ ইসলামী শিা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জামিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী থেকে হাদীছ শাস্ত্রে গভীর বুৎপত্তি অর্জন পূর্বক দাওরায়ে হাদীছ ডিগ্রী লাভে ধন্য হন। ইন্তেকালের পূর্ব মুর্হুত পর্যন্ত চট্টগ্রাম নাজির হাঁট বড় মাদ্রাসার মুহাদ্দিছ হিসেবে ইলমে নববীর খিদমতে নিবেদিত ছিলেন। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান।  আল্ল­াহ তায়ালা মরহুমকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন: আমিন।


এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...