জাবেদ আবেদীন শাহীন,কক্সবাজার ॥
“এসো হে বৈশাখ এসো এসো ---- দুর হয়ে যাক যাক এসো এসো” বৈশাকের এই গানটি বাঙ্গালীর জাতির চির চেনা। গানটির সুর হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চালন সৃষ্টি করে। আর কয়েকদিন পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনায় জাতি বরণ করে নেবে বাঙালী প্রাণের উৎসব শুভ নববর্ষ “১৪১৯” বঙ্গাব্দ। নববর্ষের এই দিনে সাম্প্রাদায়িকতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে দল মত নির্বিশেষে কাঁেদ কাদ মিলিয়ে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে মেতে থাকি। নববর্ষ বরণ উপলক্ষ্যে সর্বত্র চলছে নানান কর্মসূচীর মহা আয়োজন। সেই সাথে চলছে ফ্যাশন বৈচিত্রের বৈশাখী রঙিন পোষাকের বেচা বিক্রি। প্রতি বছর সম্পূর্ণ বাঙালীয়ানায় সার্বজনীন ভাবে বৈশাকের আগমন ঘটে। পহেলা বৈশাখে নব বর্ষের দিনটিতে উল্লাসের বৈচিত্রতা আনতে ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগটন প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠান আয়োজনে মহড়ায় ব্যস্ত রয়েছে। সেইসাথে থাকছে বৈশাখের ঐতিহ্য “পান্তা ইলিশের” মুখরোচক খাবার ও দেশীয় সংস্কৃতির স্বপ্নীল অনুষ্ঠানমালা। এদিকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরাতন হিসাব চুকিয়ে নতূন হাল খুলতে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে। সাথে থাকছে নববর্ষের দিনে ক্রেতা ও শুভাকাঙ্খিদের মিষ্টিমুখ করানো। শহরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং গুলোতে রং বেরঙয়ের বর্ণিল পোষাক “বৈশাখী ফ্যাশন” বেচা বিক্রি ভাল চলছে বলে বিভিন্ন দোকানদার জানান। তা ছাড়া সাজের প্রধান আকর্ষণ চুড়ির দোকান কসমেটিক্স দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশী। নববর্ষের দিনটিকে ঘিরে প্রতিবারের ন্যায় শহরের তারকা সমৃদ্ধ হোটেলগুলো বৈশাখের মজাদার আইটেম নিয়ে হরেক রকমের পিঠা উৎসবের প্রস্তুতি চলছে । দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে বলে আয়োজকরা জানান। এদিকে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নববর্ষের দিনে বিনোদন অনুষ্ঠান মালা ও ভোজন রসিকদের জন্য মুখরোচক খাবার পান্তা ইলিশ, শুটকি ভক্তা, ভূনা সরষে ইলিশ, বিভিন্ন ধরনের ভক্তা, ভূনা খিছুড়িসহ বৈশাখি খাবারের আয়োজন রাখা হবে বলে জানা যায়।
টেকপাড়া এলাকার গৃহিনী ইসমত জেরিন বলেন, বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব নববর্ষের ছোঁয়ায় উজ্জিবিত থাকে জাতি। খুব ভালো লাগে এ দিনে । কারো মনে থাকে না হিংসা বিদ্বেষ। সবাই মিলে বরণ করি নতুন বছরকে। ইচ্ছে করে ঐ দিনে সবাই মিলে দেশ গড়ার শপথ নিই। ছেলেমেয়ের জন্য নববর্ষের ডিজাইন করা পোষাক কিনতে এসেছি। এই দিনটি পরিবারের সকলকে নিয়ে উপভোগ করি। এবারে বাচ্ছাদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরব।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডঃ তাপস রক্ষিত জানান, নববর্ষের দিনের ভোরে শহীদ মিনার হতে বর্ণাঢ়্য বিভিন্ন ফেষ্ঠুন, মুখোষ, বেলুন, রঙিন প্লে কার্ড নিয়ে মঙ্গল শোভা যাত্রা র্যালীটি শহরে প্রদক্ষিণ করে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবে। এ ছাড়া দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক সংগটন গুলো দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরে নানান অনুষ্ঠান মালা সাজিয়ে প্রতিদিনই মহড়া করছে।
কলাতলী হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম জানান, বরাবরের মত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে ব্যাপক ভাবে নববর্ষের দিনটি যাতে করে উদযাপন করতে পারে তার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করব। পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতে করে বৈশাখের মজাদার খাবার খেতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, প্রিয়জনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয় ফুল দিয়ে। এটি হল সংস্কৃতির রীতিনীতি। ফলে প্রতি বছর নব বর্ষের দিনটিতে ভালই ফুল বিক্রি হয়। তাই এবারে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাদা, লাল রজনী গন্ধা, বেলী ফুলের কলিসহ নানান রকমের ফুল অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের এখানে বিভিন্ন প্রতিকি সমৃদ্ধ ফুলের অর্ডার নেয়া হচ্ছে। দুর থেকে আনা হয় তাই, দামটা সামান্য বেশী ।
খোঁজ জানা যায়, পহেলা বৈশাখ বাঙালীর সার্বজনীন উৎসব। দিনব্যাপী পরিবেশন থাকে বাঙালীয়ানার ছোঁয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সূর্য উঠার পর থেকে খুশির আমেজ বিরাজ করে বাঙালীর প্রতি ঘরে ঘরে। চলে একে অপরের মাঝে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়। নববর্ষকে কেন্দ্র করে এর মধ্যে চলছে রঙ বেরঙের পোষাকি সাজ সজ্জা হিসেব নিকেশ। তা ছাড়া শহরের মার্কেট শপিংমলগুলো নতূন বছরকে ঘিরে রঙবেরঙয়ের বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন সম্বলিত পোষাক কেনা বেচা করছে। বাচ্চাদের বৈশাখের পোষাকের মধ্যে রয়েছে নানান রঙয়ের বর্ণিল কাপড় দাম ১৫০/৮৫০টাকা পর্যন্ত। ছেলেদের রয়েছে নানান রংয়ের আকর্ষনীয় ফতুয়া ২০০/৬৫০টাকা, শট পাঞ্জাবী ২৫০/১২০০টাকা, গ্রামীন শর্ট টি শার্ট ৩৫০/৭৫০টাকা । বৈশাখে সাজে নারী তার চিরায়ত রূপ লাবণ্যের সাজ সজ্জা প্রস্ফুটিত হয় শাড়ী পরার মাধ্যমে। তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ আাকর্ষণীয় বৈশাখী ব্লকের শাড়ী, প্রিন্ট শাড়ী, গ্রামীণ চেক শাড়ী, আল্পনা সম্বলিত শাড়ী দাম ৪০০/১০৫০টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ত্রি পিস দাম ৩০০/১০০০টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া বৈশাখী পোষাকে সাজ সজ্জা করতে এখন মার্কেটগুলোতে প্রতি নিয়ত ক্রেতার ভিড় বাড়ছে বলে দোকানীরা জানান।
ইডেন গার্ডেনের শাড়ী মেলার স্বক্তাধিকারী জয়নাল আবেদীন (জানু) বলেন, চাহিদা থাকায় এবার নববর্ষের পোষাক ডিজাইনের বৈচিত্রতায় ভিন্ন আঙ্গিকে দোকানে শাড়ী, ত্রি পিছ, বৈশাখের রঙ বেরংয়ের কাপড় রাখা হয়েছে। বেচা বিক্রি ভাল ভাবে চলছে। তবে বাচ্চাদের জন্য বৈশাখকে সামনে রেখে আকর্ষণীয় কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশী। দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।