শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১২

পেকুয়ায় ফতোয়া দিয়ে আলিম পরীক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে জুতাপেঠা!

রামু নিউজ ডেস্ক ॥    
ইভটিজিংয়ের অভিযোগ এনে ফতোয়াবাজের রায়ে শত শত মানুষের সামনে এক আলিম পরীক্ষার্থীকে জুতাপেঠা করা হয়েছে। এই পরীক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ এহতাশেমুল হক তিতুমীর। সে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফাঁশিয়াখালী নতুন পাড়া এলাকার মুফতি শামসুল হক আজিজির পুত্র ও চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আর্দশ কামিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত ২০মার্চ স্থানীয় মৌলভী বাজার ফারুকিয়া মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত শত শত মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীর সামনে তাকে জুতাপেঠা করা হয়। ঘটনাটির ভিডিও চিত্র দুই একদিন আগে পেকুয়াসহ ইন্টারনেট ও ফেসবুকে ছাড়িয়ে পড়লে পুরো কক্সবাজার জেলায় এনিয়ে তোলপাড় চলছে। নির্যাতিত তিতুমীরে ভাষ্য, এঘটনার পর তার জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠছে। পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ফাঁশিয়াখালী ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এইচএম বদিউল আলম অভিযোগকারী মেয়েটির পায়ের জুতা দিয়ে ২১বার প্রকাশ্যে আঘাত করার মধ্য দিয়ে ওই  ফতোয়া কার্যকর করেন। এদিকে ওই ঘটনার ফতোয়াদান করাী চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলমের শাস্তি দাবি করে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করার ঘটনাও ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার ছাত্রটি এঘটনার বিচার চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে চেয়ারম্যানের শাস্তি দাবি করে অভিযোগ দিয়েছেন। অবশ্যই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই খাজা আলামীন বলেন, ফতোয়া জারির আগে ওই ছেলেটি অভিযোগকারী মেয়েটিকে প্রকাশ্যে রাস্তায় বেদড়ক মরধর করে। আইনগত ঝামেলা এড়াতে অভিযুক্ত ছেলের পিতা ওই ফতোয়ার ঘোষনা দিয়ে তা কার্যকর করেছেন। ঘটনাটি তিনি ২০মার্চের পরে জেনেছেন বলেও এ প্রতিবেদককে জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মো: এহতাশেমুল হক তিতুমীরের বিরুদ্ধে মৌলভী বাজার মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্রী তাকে ইভটিজিংয়ে উত্যক্ত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে অভিযোগ করেন। পরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিষয়টি বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা এইচএম বদিউল আলমকে জানালে তিনি ২০মার্চ মৌলভী বাজার মাদ্রাসা মাঠে প্রকাশ্যে বিচারের ঘোষনা দেন। ওই দিন বারবাকিয়া চেয়ারম্যান এইচ এম বদিউল আলম পার্শ্ববর্তী টৈটং ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিনকে দাওয়াত দিয়ে সালিশী বিচারে বসেন। এসময় মাওলানা বদিউল আলম ফতোয়া জারি করেন, যে ছাত্রীটিকে ইভিটিজিং করা হয়েছে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক সে-ই নিজ পায়ের জুতা দিয়ে ওই ইভটিজারকে ২১বার প্রকাশ্যে জুতাপেঠা করবে। ফতোয়া মোতাবেক ছাত্রীটি হাজার হাজার জনগনের সামনে নিজ পায়ের জুতা খুলে ওই ছাত্রকে মাথায়, মুখে ও বুকে ২১বার জুতা দিয়ে আঘাত করে। ছেলেকে দেওয়া শাস্তির অপমান সইতে না পেরে উপস্থিত পিতা মুফতি শামসুল হক আজিজিও ছেলেকে পরে সবার সামনে মারধর করেন। সবার সামনে ছেলেকে দেওয়া শাস্তির লজ্জা ও অপমান সইতে না পেরে তিনি তার ছেলেকে মারধর করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান। তবে তিনি বলেছেন,  মাওলানা বদিউল আলম চেয়ারম্যান একজন ওয়ায়েজ, আমিও একজন ওয়ায়েজ। কিন্তু আমার মতবাদের সাথে ওই মাওলানা চেয়ারম্যানের মতবাদের মিল না থাকায় আমার ছেলেকে ফতোয়া দিয়ে তার প্রতিশোধ নিয়েছেন। নিজের ছেলের বিরুদ্ধে নিজেই ফতোয়া দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে এখন বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি এই নির্মম ওই ফতোয়াবাজির বিচার চাই। জুতাপেঠার শিকার ছাত্র তিতুমীর অভিযোগ করে বলেন, আমার ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত করে তুলতে কুচক্রী মহল ইভটিজিংয়ের মতো একটি আভিযোগে আমাকে জড়িয়ে ফতোয়া দিয়েছেন। ওই মেয়েটির সাথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিতুমীর বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ফতোয়া নিষিদ্ধ করলেও ফতোয়াবাজ চেয়ারম্যান বদিউল আলম ২১বার জুতাপেঠার শাস্তির ফতোয়া বাস্তবায়ন করেছেন। আমি  যদিওবা ইভটিজিং করে থাকি তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে আমাকে শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে ওই ছাত্রীর জুতা দিয়ে আমাকে পেঠানো হয়েছে। যা মানবতা বিরোধী। আমি এর বিচার চাই। এব্যাপারে বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ফতোয়াদানকারী মাওলানা এইচএম বদিউল আলমের বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ফতোয়া দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী। বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ওই বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...