সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১২

রামুতে বিধি লংঘন করে অন্য এলাকার বিয়ে রেজিষ্ট্রি

॥ সোয়েব সাঈদ ॥ 
রামু উপজেলার সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের স্বপ্নপুরী কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলছিলো গত ১৮ মার্চ। এ বিয়ের বর আবুল কাশেম ও কনে তানজিনা দুজনের বাড়িই ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে। সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিষ্ট্রার থাকলেও ওই
দিনের বিয়েটি পড়ান আবু বকর নামের অন্য এলাকার (রাজারকুল ইউনিয়নে নিয়োগপ্রাপ্ত) নিকাহ রেজিষ্ট্রার। বিষয়টি নিয়ে ওই বিয়েতে আসা অনেক সচেতন ব্যক্তি সমালোচনা করেছেন। সরকারী বিধি অনুয়ায়ি এক ইউনিয়নে অন্য ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে পারেন না।
জানা গেছে, বিগত ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান মৌলানা আবু বকর ছিদ্দিক। নিয়োগ পাওয়ার পর রাজারকুল ইউনিয়নের শিকলঘাট এলাকায় নিজস্ব অফিস করার পরও রামু চৌমুহনী ষ্টেশনে নিকাহ রেজিষ্ট্রার এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
রামুর অন্যান্য ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের অভিযোগ, মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিক ফতেখাঁরকুল সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিয়ের খবর সংগ্রহ করে নিজস্ব লোকজন দিয়ে প্রভাবিত করে নিজেই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। অপরদিকে অন্যান্য ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রাররা সরকারকে রাজস্ব দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
রামু সদর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী মোহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ জানান, রাজারকুল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিষ্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে আবু বকর সিদ্দিক রামু চৌমুহনীস্থ বিজয় ধরের মালিকানাধীন মাকের্টের তৃতীয় তলায় একটি বীমা  প্রতিষ্ঠানের অফিসে কর্মরত ছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি (নিকাহ রেজিষ্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক) ওই বীমা প্রতিষ্ঠানের অফিসে বসে বিয়ের কাবিন নামা সস্পন্ন করে আসছেন। আর অফিসেই বসে তিনি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার রাজারকুল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা আবু বকর সিদ্দিককে বারন করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। সর্বশেষ রামু উপজেলার সকল নিকাহ রেজিষ্ট্রারগন এ ব্যাপারে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে মাওলানা আবু বকর নিজের ইউনিয়ন ব্যতীত অন্য ইউনিয়নের বিয়ে রেজিষ্ট্রে করবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার দিলেও পরে তা ভঙ্গ করেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি কাজী অফিসের কার্যক্রম চালানোর জন্য চৌমুহনীস্থ বীমা অফিসের পার্শ্ববর্তী আরো একটি কক্ষ বরাদ্ধ নেন নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। বর্তমানে ওই অফিসে অন্যান্য এলাকার বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার হিড়িক চলছে।
ওই অফিসে ২৩ মার্চ ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের তেচ্ছিপুল এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে জাহেদুল আলম আঙ্গুর এর সাথে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম মনিরঝিল এলাকার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে রোজিনা আক্তারের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন রাজারকুল  ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
উল্লেখ্য ২০০৯ সালের ১০ আগষ্ট আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নিকাহ রেজিষ্ট্রার নীতিমালা সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনের ২৫ নং বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিবাহ ও তালাক যে স্থানে সম্পন্ন হইয়াছে, উক্ত স্থানে যে নিকাহ রেজিস্ট্রারের এলাকাভূক্ত সেই নিকাহ রেজিষ্ট্রার কর্তৃক প্রতিটি বিবাহ/তালাক নিবন্ধন করিতে হইবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক বলেন, এক ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার অন্য ইউনিয়নের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে পারবে না। এটা বি-আইনী।
রামু চৌমুহনী ষ্টেশনের অনেক বাসিন্দা জানান, নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক প্রতিদিনই বিয়ে পড়াচ্ছেন। যার অধিকাংশই অন্য ইউনিয়নের।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বেলাল বিষয়টির সত্যতা করে জানান, এ নিয়ে ইতিপূর্বে কয়েকদফা সমঝোতা হলেও মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বার বার নিয়ম লংঘন করে অন্য ইউনিয়নের বিয়ে পড়াচ্ছেন। যা খুবই দুঃখজনক। গর্জনিয়া ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা ফরিদ উদ্দিন জানান, এক ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার অন্য ইউনিয়নের বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে পারেন না। এটা বে-আইনী। আমি নিজেও এ কাজ থেকে বিরত থাকি।
রাজারকুল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রারও আমার এলাকার বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন। তিনি এ কাজ না করলে আমিও করব না। তাছাড়া তিনি গত ১৮ মার্চ ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের স্বপ্নপুরী কমিউনিটি সেন্টারে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বর-কনের একটি বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, বর পক্ষ আমার আত্মীয় ছিলো। তাই তাদের অনুরোধে ওই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছি। এছাড়া চৌমুহনীস্থ অফিসে বসলেও ওই অফিসে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করেন না বলে জানান তিনি। লিখিত অঙ্গীকার নামা প্রসংগে তিনি বলেন, এটি ছিলো নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য ডাকা সভার কার্যবিবরণী।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক আরো জানান, এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নিকাহ রেজিষ্ট্রারকে ডেকে সতর্ক করা হবে। এর পরও বন্ধ না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি প্রত্যেক ইউনিয়ন নিকাহ রেজিষ্ট্রারকে স্ব-স্ব এলাকার বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার অনুরোধ জানান।






এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...