বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

কক্সবাজারে পর্যটনের জমি লিজ নিয়ে লোকচুরি: কর্পোরেশনের রাজস্ব ক্ষতি কোটি টাকা

samudrik prani pict-2.jpgsamudrik prani pict-2.jpgsamudrik prani pict-2.jpg॥ মহসীন শেখ, কক্সবাজার ॥   
কক্সবাজার পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল উপলের ৩৯ শতক জমি নামেমাত্র টাকায় গোপনে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ২বছরের লিজ দেয়া হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান ডাঃ বদরুদ্দোজার পুত্র দলের মহা সচিব মাহি বি চৌধুরী এমপি’র প্রতিষ্ঠান ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র নামে ২ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকায়। তিনিই প্রজেক্টের উপদেষ্টা মন্ডলির সভাপতি। লিজ গ্রহিতা প্রায় দেড় মাস আগে ওই জমিতে কাজ শুরু করেছে। এই কারণে পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল উপলের সৌন্দর্য্যহানী ও নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান। বিষয়টি এতোদিন গোপন ছিলো। পরে কর্পোরেশনের জমি খন্ডিত করে সীমানা দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু হলে চারদিকে হই চই পড়ে যায়। তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র।

এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। কর্পোরেশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অগোচরে পছন্দের ব্যক্তিকে লিজ দিয়ে দেন। এভাবে কক্সবাজার পর্যটন কর্পোরেশনের অন্যান্য স্থাপনার পাশের খোলা জমি ক্রমান্বয়ে ব্যক্তি বিশেষকে লিজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। স্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে জানান, ওই জমি টুকু দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রকাশ্যে লিজ দেয়া হলে কর্পোরেশন এককালিন ১ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো। এছাড়া মাসিক ভাড়াও পাওয়া যেতো লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু ওসব বিষয় সরাসরি ঢাকা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় স্থানীয়ভাবে কিছুই করার থাকেনা বলেও তিনি জানান।

ইতোমধ্যে ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’ নামের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় প্রধান ফটকের দেয়ালে নিষিদ্ধ সামুদ্রিক প্রবাল ও ঝিনুক দিয়ে খোদাই করে প্রতিষ্ঠানের নাম লিখা হয়েছে। ৩৯শতক জমিটি পাকা দেয়ালে ঘেরাও করে উপল থেকে আলাদা করা হয়েছে। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই নির্মাণ করা হয়েছে আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীকী ‘স্ট্রাকচার অব লিভারটিজ’র ভাষ্কর্য্য। এরপরে একটি ভবন, দক্ষিণে জিরাপ, পাশে কয়েকটি হাতি, মাঝখানে ১৭ ফিট লম্বা ও ৮০ মণ ওজনের মৃত তিমি মাছকে কত্রিম উপায়ে সংর—গণ করা হয়েছে, তার একটু সামনে একই পদ্ধতিতে রাখা হয়েছে স্টিংরে নামের সামুদ্রিক বিরল প্রজাতির প্রাণী, তারপর একটি বিশাল আইচ হাউস(বরফ ঘর), পাশেই সামুদ্রিক প্রাণী প্রদর্শনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি থ্রিডি থিয়েটার, পেছনে লাইভ পিশ এ্যাকুরিয়াম, পরে স্টাফ কোয়ার্টার, উত্তর পাশের সীমানায় তৈরী করা হয়েছে মৃত সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর এ্যাকুরিয়াম। এছাড়াও সামুদ্রিক বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণী রাখা হবে বলেও সুত্রে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজে দায়িত্বরত ওই প্রজেক্টের পরিচালক ও কক্সবাজার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাঠকর্মী আব্দুল আলীম’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, তাদের পজেক্ট ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র উপদেষ্টা মন্ডলির সভাপতি মাহি বি চৌধূরী এমপি, প্রকল্প পরিচালক মাষ্টার আবু মনছুর, প্রজেক্টের উপদেষ্টা কক্সবাজার জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাফর আলম, অ্যাডভোকেট বাবুল কান্তি দাশ ও আল আরাফা ব্যাংকের কর্মকর্তা নোমান চৌধুরীসহ ক্ষমতাশীন দলের কেন্দ্রীয় প্রর্যায়ে বেশ ক’জন নেতাসহ প্রায় ২০/৩০ জন ব্যক্তি রয়েছে। মাহি বি চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ওসব নেতারাই বাংলাদেশ পর্যটন চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদারের কাছ থেকেই ২ বছরের জন্য চুক্তিতে লিজ নিয়েছে। তিনি বলেন ২বছরের জন্য ৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ৩ লক্ষ টাকা আগাম দেয়া হয়েছে এবং মাসিক ভাড়া ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র উপদেষ্টা অ্যাড. জাফর আলমের সাথে কথা বললে তিনিও মাহি বি চৌধুরী প্রজেক্টের উপদেষ্টা মন্ডলির সভাপতি বলে দাবি করে বলেন, পর্যটন কর্পোরেশনের বিভিন্ন মোটেলে যেভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে সে ভাবেই তারা চুক্তির মাধ্যমে প্রজেক্টের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলে বি চৌধুরী সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতারাও তাদের প্রজেক্টে রয়েছেন। তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই পর্যটন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জমি নেয়া সম্ভব হয়েছে।

এদিকে বিকল্প ধারা পার্টির মহা সচিব মাহি বি চৌধুরী এমপি’র সাথে তার মোঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্লেখিত বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, কক্সবাজার ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র বিষয়টি আমার জানা নেই।

প্রকল্প পরিচালক মাষ্টার আবু মনছুর জানান, পর্যটনের সৌন্দর্য্য বিকাশ, ভবিশ্যত প্রজন্মের জন্য শিক্ষা, প্রাণী বিষয় নিয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় হিসাবে তাদের প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্ব রয়েছে। আগামী  মার্চের মধ্যেই তাদের প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ২৬ মার্চ পর্যটন চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ বিশেষ ব্যক্তিবর্গরা প্রজেক্টের উদ্ভোধন করবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র টিকিট মূল্য করা হবে ২৫ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট মূল্য অর্ধেক এবং শিশুদের বিনা মূল্যে ঢুকতে দেয়া হবে। থ্রী ডি’র টিকিট ৩০ মিনিট দেখানো হবে ৫০ টাকায়।

কক্সবাজার পর্যটন মোটেল উপলের ম্যানেজার খন্দকার সাজ্জাদুল গনি’র সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ পর্যটন চেয়ারম্যান’র কাছ থেকেই ‘পর্যটন সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’র নামের প্রজেক্টটির জন্য ৩৯ শতক জমি লিজ নেয়া হয়েছে। তিনি ২বছরের জন্য ৬ লাখ টাকার চুক্তির অর্ধেক অগ্রিম দেয়া হয়েছে এবং মাসিক ভাড়া ৬০ হাজার টাকা বলে স্বীকার করেছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট একে আহমদ হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত নেই বলে জানান।

এদিকে সচেতন মহলের ধারণা, কোন রকম সচ্ছতা ছাড়াই যে কেউ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পর্যটনের জমি লিজ দেয়া হলে বাকি জমিও একই ভাবে হাত ছাড়া হতে বাধ্য হতে হবে।

উল্লেখ্য, ‘সামুদ্রিক প্রাণী যাদুঘর’টি ‘কক্সবাজারের হিমছড়ি পেঁচার দ্বীপে ছিলো।

এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...