সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

২ বছরের শিশুর ‘মিস্ত্রি’ শব্দে সন্ধান মিললো খুনির

॥রামু নিউজ ডেস্ক॥   চট্টগ্রাম নগরীর রসুলবাগ আবাসিক এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রী খতিজা বেগম বেবির ৫ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর ফলে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হলো। 

৫ হত্যাকারী হচ্ছে- মোহাম্মদ আলী (১৮), মোহাম্মদ সোহাগ (২২),
শহিদুল ইসলাম প্রকাশ ইলিয়াছ (২২), আব্দুল হান্নান (১৮) ও সোহাগ (২২)। এর মধ্যে ইলিয়াছ ঘটনার সময় খতিজা বেগমের বাসায় টাইলস লাগানোর কাজে নিয়োজিত ছিল। 

হত্যাকারীরা জানিয়েছে, ইলিয়াছ টাইলসের কাজ করতে গিয়ে খতিজা বেগমের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এরপর ডাকাতি করতে গিয়ে ইলিয়াছের বন্ধু নিশান খতিজা বেগমকে জবাই করে হত্যা করে। 

গ্রেফতার অভিযানের বিষয়ে নগর পুলিশের উত্তর জোনের সহকারী কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর থেকে খতিজা বেগমের ২ বছরের শিশু ইয়ামিনের ‘মিস্ত্রি’ উচ্চারণে ওই বাসার টাইলস মিস্ত্রিদের নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ হয়। এরপর চট্টগ্রাম নগরী ও নোয়াখালীতে টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৫ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়।’

১৭ ফেব্রুয়ারি রসুলবাগ আবাসিক এলাকার নিজ মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিজ বাসায় ২ বছরের শিশু সন্তানের সামনেই জবাই করে খতিজা বেগমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাকলিয়া থানায় তার ভাই ইউনুস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার আবুল কাশেম বলেন, ‘ডাকাতরা ভিকটিমের বাসায় ঢোকার পর ভিকটিম নিজেই ৫ হাজার টাকা তাদের দেন। এ সময় তারা আরো টাকা, মালামাল, আলমিরার চাবি ছিনিয়ে নিতে চাইলে খতিজা বেগম চিৎকার দেন। এরপর ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাতরা তাকে জবাই করে হত্যা করে।’

প্রথমে খতিজা বেগমের বাসা থেকে লুট করা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে মোহাম্মদ আলী এবং তার দেওয়া তথ্যে নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার থেকে মোহাম্মদ সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়। 

এরপর নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানা এলাকা থেকে শহিদুল ইসলাম ওরফে ইলিয়াছ ও নগরীর পোর্ট কলোনি এলাকা থেকে মো. সোহাগ ও হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া একটি নোকিয়া মোবাইল সেট, একটি ২ ভরি ওজনের স্বর্ণের নেকলেস, একটি শাড়ি এবং ৩টি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।

সোমবার দুপুরে গ্রেফতার হওয়া ডাকাতদের সিএমপি কমিশনারের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়।

এ সময় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ইলিয়াছ জানায়, ইলিয়াছ এবং নিশান বেবির বাসায় টাইলসের কাজ করছিল। ঘটনার দিন শুক্রবার তারা কাজে যায়নি। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে তারা ৭ জন মিলে নগরীর হালিশহর বড়পুল এলাকায় বালির মাঠে বসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। 

ঘটনার দিন দুপুর দেড়টার দিকে তারা ওই বাসায় যায়। টাইলস মিস্ত্রি ইলিয়াছ পরিচয় দিয়ে দরজা নক করলে খতিজা বেগম নিজেই দরজা খুলে দেন। এরপর তারা ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তিনটি ছুরি দেখিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। 

ভয় পেয়ে খতিজা বেগম ৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হয়। এরপরও ডাকাতরা আরো চাপ দিতে থাকলে তিনি হঠাৎ চিৎকার দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিশান প্রথমে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে। এ সময় খতিজার দত্তক নেওয়া ২ বছরের শিশু সন্তান ইয়ামিন মায়ের পাশেই ছিল। তবে এ সময় সে কোনো শব্দ করেনি।

ইলিয়াছ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে জবাই করার কথা ছিল আমার। কিন্তু নিশান আগে জবাই করে ফেলে। ডাকাত আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিশানকে জবাই করতে দেখিনি। তবে ইলিয়াছকে ওই মহিলার গলা টিপে ধরতে দেখেছি।’

নগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) আজিজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘খতিজাকে মেরে ফেলার পর আরো ২০ থেকে ২৫ মিনিট তারা ঘরে ছিল। ঘরের ভেতর আলমিরা, ওয়ারড্রব ভেঙে মালামাল নিয়ে বের হয়ে তারা সিএনজি টেক্সিযোগে চলে যায়। এরপর হালিশহরে সাগরের বেড়িবাঁধের উপর গিয়ে মালামাল ভাগ করে। ইলিয়াছ পরিকল্পনাকারী হওয়ায় সে দামি মোবাইল সেট এবং নেকলেসটি নেয়।’

তিনি বলেন, ইলিয়াছ পুলিশকে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর সে রাতে ঘুমাতে পারেনি। সারাক্ষণ শুধু খতিজা বেগমের মুখ তার চোখে ভাসতে থাকে। এরপর থেকে ইলিয়াছ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। 

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিশানসহ আরো দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনের সময় খতিজা বেগমের মা জরিনা বেগম, ভাই ইউনুস মিয়া, ভাইয়ের স্ত্রী শাম্মী আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জরিনা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...