॥ মহসীন শেখ, কক্সবাজার ॥
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। ধ্বংস হওয়া প্যারাবন নতুন করে সৃষ্টি, সমুদ্র প্রাণী রক্ষা
এবং ওই সব প্রানীর আবাসস্থল উপযোগী পরিবেশ তৈরী করে এ তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এর জন্য সোনাদিয়ায় কাজ করে যাচ্ছে নেকম, আইইউসিএন, এসবিএফ ও হেল্প নামের ৪ টি সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলছে এসব কার্যক্রম। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের ব্যাপক তৎপরতা চলছে। ধ্বংস হওয়া প্যারাবন নতুন করে সৃষ্টি, সমুদ্র প্রাণী রক্ষা
জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে তৈরী করা হয় চিংড়ি ঘের। যার প্রভাবে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।
কিন্তু গত সোমবার সরেজমিন সোনাদিয়া দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, এক সময় লাকড়ী ব্যবহার, চিংড়ি ঘের তৈরীর জন্য যারা দ্বীপের প্যারাবনের উদ্ভিদ নিধন করেছেন তারাই এখন তা রক্ষাত্বে সচেতনভাবে কাজ শুরু করেছেন। যার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে নতুন করে তৈরী হয়েছে প্যারাবনের কেউড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতের উদ্ভিদ। সোনাদিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় নতুন করে তৈরী করা এসব প্যারাবনে গহীন অরণ্যের মতো পরিবেশ দেখা যায়। আর ওই সব প্যারাবনের ভেতরে দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক পাখি।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, কক্সবাজার উপকুলীয় এলাকায় ১২১৫ ধরণের জীববৈচিত্র রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ রয়েছে ৫৬৭, শামুক ১৬২, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার ২, মাছ ২০৭, উভয়চর ১২, সরীসৃপ ১৯, পাখি ২০৬ প্রজাতের দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্ত এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে এসব জীববৈচিত্র হুমকির মুখে রয়েছে এবং তা ক্রমাগত বিলুপ্ত হতে চলছে। তিনি জানান, প্রকল্পের অধিনের ইতিমধ্যে সোনাদিয়ায় ১৮৮ হেক্টর ও কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকায় ১০০ একর নতুন প্যারাবন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসির সহযোগীয় তা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সুমন জানান, লাকড়ির কম ব্যয়ের জন্য দ্বীপের অধিবাসিদের উন্নত চুলা ব্যবহারে উৎসাহী করা, উন্নত চুলা সরবরাহ, গ্রাম সংরক্ষণ দল তৈরী করে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রাম ভিত্তিক কর্মশালা, স্থানীয়দের জীবন উন্নয়ন মুলক প্রশিক্ষণ প্রদান সহ নানা কর্মকান্ডের কারণে জীববৈচিত্র রক্ষার মতো পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধিনে প্যারাবন পাহারায় কাজ করছেন দ্বীপের ৪ ব্যক্তি। এদের মধ্যে আজিজুর রহমান জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যারাবন পাহারা দেন তিনি। প্যারাবন নিধন, পশুদের কবল থেকে প্যারাবন রক্ষার জন্য তিনি সচেতন রয়েছেন। সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম ও পূর্ব পাশের বালিয়াড়িতে এক ধরণের উদ্ভিদ রোপন করা হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় স্থানীয় নারীদের অংশ গ্রহণে সেলাই প্রশিক্ষণ ও একই সাথে সোনাদিয়া দ্বীপের পূর্ব পাড়ায় সামুদ্রিক কাছিমের ডিম সংরক্ষণের দৃশ্যও চোখে পড়েছে। ওখানে প্রকল্পের জীব বৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম জানান, সামুদ্রিক কাছিম প্রকৃত পরিবেশ ডিম ছাড়ার পর তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আর তা বাচ্চা ফুটলে সমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের অধিনে এখন ৪ হাজারের বেশি ডিম সংরক্ষণে আছে বলে জানান তিনি।
নতুন করে প্যারাবন সৃষ্টির কারণে প্যারাবন কেন্দ্রিক ঝাঁক-ঝাঁক সামুদ্রিক গাঙচিল, মাছরাঙা পাখি, ঈগল উড়ে অন্য এক পরিবেশ তৈরী করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, ধারাবাহিকভাবে দ্বীপের পুরো অংশ পূর্বাস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো নানা কর্মকান্ড চলছে।