॥ মহসীন শেখ,কক্সবাজার ॥
পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী-ইন পয়েন্টে ২৫টি কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকাল ৫টায় প্রজনন কেন্দ্রে ডিম থেকে ফুটানো কাছিমের বাচ্চা গুলো অবমুক্ত (নেকম)। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নেকম’র ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমানের সমন্বয়ে ওসব বাচ্চা কচ্ছপ গুলো সাগরের পানিতে অবমুক্ত করা হয়।
কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্তকালে উপস্থিত
ব্যক্তিবর্গসহ সমুদ্র গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশের জলসীমায় ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ রয়েছে। যেমন, অলিভ রিডল কচ্ছপ, সবুজ কচ্ছপ, হকসবিল কচ্ছপ, লেদারব্যাক কচ্ছপ ও লগারহেড কচ্ছপ। প্রতি বছর আগষ্ট থেকে ডিসেম্বর মাসে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মৌসুম। তারা খুবই নির্জন এলাকায় ডিম পাড়ে। তবে সাগরে মাছ ধরায় পানিতে প্রচুর প্রাপ্ত এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সামুদ্রিক কচ্ছপ আটকা পড়ে, কুকুর ও শিয়াল ডিম পাড়তে আসা কচ্ছপের ডিম খেয়ে ফেলে, অসচেতন ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ডিম সংগ্রহ করে, রাতে সৈকতে বিনোদন, যেমন- গান-বাজনা, আগুন জ্বালানোর ফলে স্ত্রী কচ্ছপ ভয়ে ডিম না পেরে চলে যায়, ডিম পাড়ার সৈকতে টুরিষ্ট মোটেল স্থাপন, সাগরে ভাসা জাল, শীল জাল, চিংড়ি ট্রলারের বেপরোয়া চলাচল, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, জলবায়ুর পরিবর্তন ও সৈকত ভাঙ্গনসহ নানা কারণে ওসব কচ্ছপ ও লাল কাকরা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি সামুদ্রিক প্রাণী আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী-ইন পয়েন্টে ২৫টি কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকাল ৫টায় প্রজনন কেন্দ্রে ডিম থেকে ফুটানো কাছিমের বাচ্চা গুলো অবমুক্ত (নেকম)। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নেকম’র ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমানের সমন্বয়ে ওসব বাচ্চা কচ্ছপ গুলো সাগরের পানিতে অবমুক্ত করা হয়।
কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্তকালে উপস্থিত
সূত্র জানায়, সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট‘র(নেকম) উদ্যোগে সমুদ্র উপকুল কক্সবাজারের পেঁচারদ্বীপ, বড়ডেইল, খুরের মুখ, শাহপরীরদ্বীপ ও সোনাদিয়ার পূর্ব পাড়ায় ৫টি কচ্ছপ হ্যাচারী ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ওই ৫টি হ্যাচারীতে মোট ১৪ হাজার ৫‘শ ৮৩টি ডিম হ্যাচলিংয়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। সমুদ্র এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ, হ্যাচারী গর্তে সংরক্ষণ, হ্যাচারী ও সৈকত পাহারা দেয়ার জন্য ১০ জন অভিজ্ঞ স্থানীয় লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সমুদ্রে ওসব পরিবেশ রক্ষাকারী কচ্ছপ ও তাদের ডিম পাড়াসহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হচ্ছে, ডিম পাড়ার স্থানে টর্চের আলো বা আগুন না জালানো, ক্যামেরার ফাস লাইট ব্যবহার না করে ছবি তোলা, গর্ত থেকে ডিম না তুলে ডিম পাড়ার স্থান সংরক্ষণ করা, কুকুর ও শিয়াল তাড়ানো, সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ডিম পাড়ার স্থানে সৈকতে রাতে গান-বাজনাসহ হৈ-হুল্লোড না করা, মোটর সাইকেল অথবা বীচ বাইক না চালানো, ডিম পাড়তে উঠা কচ্ছপের পিঠে না উঠা ও তাদের বিরক্ত না করা।
বিশেষজ্ঞরা জানায়, কচ্ছপ সরীসৃপ, অতি প্রাচীন এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যারা দশ কোটি বছরেরও পূর্বে সৃষ্টি হয়। এদের প্রাপ্ত বয়স্ক হতে বেশ সময় লাগে এবং অনেক বছর বেঁছে থাকে। জীবদ্দশায় এরা এক মহাসাগর হতে অন্য মহাসগরে হাজার হাজার মাইল পথ পরিভ্রমণ করতে পারে। এরা উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে পুষ্টির যোগান দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। এদের শ্বাস-প্রস্বাসের জন্য পানি থেকে বাতাসের সংস্পর্শে এবং ডিম পাড়ার জন্য বালুকাময় সৈকতে অবশ্যই আসতে হয়। বিশেষ করে সামুুদ্রিক জেলি ফিস, কাকড়া, শামুক-ঝিনুক, স্পঞ্জসহ সমুদ্র তলদেশের গাছ-পালাই কচ্ছপের খাদ্য।