॥ রামু নিউজ ডেস্ক ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের
বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের
মানুষের জন্য কাজ করে, দেশে শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা ফিরে আসে। আমরা চাই
ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ।
আমার চাওয়া
পাওয়ার কিছু নেই, আমি দেশের উন্নতি চাই, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলব
চট্টগ্রামবাসীর কাছে এই ওয়াদা করে গেলাম।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
তরান্বিত করার দাবিতে ১৪ দলের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব
কথা বলেন। গতকাল রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভপতিত্ব করেন
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
সকালে
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়ামে নির্মিত
হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করলে সেখানে মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগের
নেতারা তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর
কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে নবনির্মিত ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। বিকালে মহাসমাবেশে
ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সকাল থেকেই মিছিলের পর মিছিলে আসতে
শুরু করে পলোগ্রাউন্ডে। ১৪ দলের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিলো
পলোগ্রাউন্ডের বাইরের এলাকাজুড়ে। মহাসমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই ব্যানার,
ফেস্টুন নিয়ে পলোগ্রাউন্ডে জড়ো হতে শুরু করেন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা। মঞ্চের
সামনে মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ
আওয়ামী লীগের নেতাদের ছবি সম্বলিত বেলুন উড়ানো হয়। খ্যাতিমান শিল্পী মমতাজ,
ফকির শাহাবুদ্দিনসহ টেলিভিশন ও বেতার শিল্পীদের গানের মধ্য দিয়ে সভা শুরু
হয়।
বেলা সোয়া ২ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
সমাবেশ শুরু হলেও মাঠের এক তৃতীয়াংশ খালি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ৪০
মিনিটে সমাবেশের মঞ্চে এসে উপস্থিত হন। মুহূর্তেই পলোগ্রাউন্ড লোকে
লোকারণ্যে হয়ে যায়। বিকাল ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে
শুরু করেন, টানা ৩২ মিনিট বক্তৃতা দেন তিনি। মহাসমাবেশ শেষে
হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মহাসমাবেশে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে চট্টগ্রামকে প্রকৃত বাণিজ্যিক
রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এ
সরকারের আমলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। বন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর
লক্ষ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সমুদ্রসৈকতের উন্নয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলের
অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও বেশি গতিশীল করা হচ্ছে। সিডিএসহ বিভিন্ন সরকারি
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত উন্নয়ন শেষ হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ডে প্রাণসঞ্চার হবে। আর এ লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি
আরো বলেন, আমি যখনই চট্টগ্রাম আসি চট্টগ্রামবাসীর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে
আসি। আজও আমি চট্টগ্রামবাসীর জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। আজ প্রায় তিন হাজার ১৫
কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো সরকার গুরুত্ব দেয় না।
বিএনপি
চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ওনি মা হয়ে
ছেলেদেরকে চুরি করা শেখান। লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী
যখন ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করে-তখন দেশের ভাবমূর্তি কী থাকে? বিএনপি যখন
ক্ষমতায় আসে তথন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রথম হয়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলে
তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার মামলায় এফবিআই এসে
সাক্ষ্য দিয়ে বলেন-তারা মানি লন্ডারিং করেছে। এর চেয়ে লজ্জার কী আছে!
চোরের মায়ের আবার বড় গলা।
বিএনপিকে ‘লুটেরার দল’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি লুটপাট করে ৪ হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ
উৎপাদন ৩৩০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে। আমরা ক্ষমতায় এসে আড়াই হাজার মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি।
তিনি বলেন, বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষের
মধ্যে হত্যাকাণ্ড চালায়। চট্টগ্রামের জামালউদ্দিনকে তারা নিজেরাই খুন করে।
যারা নিজ দলের নেতাকে হত্যা করতে পারে তাদের কাছ থেকে জনগণ কী আশা করতে
পারে? তারা সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবে না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায়
খালেদা জিয়ার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ তিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না।
স্বাধীনতাবিরোধীদের বাঁচাতেই তার সব আন্দোলন ও হুমকি-ধমকি। কিন্তু উনি
তাদের বাঁচাতে পারবেন না। চারদলীয় জোট সরকার আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য
ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু গ্যাস
দিতে পারেননি। কারণ, জনগণই তা প্রতিরোধ করে দিয়েছে। বিএনপি চায় নিজেরা
কীভাবে ভালো থাকবে, বিত্তশালী হবে। জনগণ কী পেলো কী পেলো না, সাধারণ মানুষ
দুবেলা ভাত খেতে পারলো কি পারলো না তা নিয়ে তাদের চিন্তা নেই।
প্রধানমন্ত্রী
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বলছেন ক্ষমতায় এলে আমাদের সব
কর্মকান্ড বন্ধ করে দেবেন। আপনি কি মিয়ানমারের কাছ থেকে পাওয়া সমুদ্রসীমা
ফিরিয়ে দেবেন, বর্তমান সরকারের উৎপাদন বাড়ানো হাজার হাজার মেগাওয়াট
বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন?
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের আমলে
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম
বন্দরের আধুনিকায়ন করেছি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে,
কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ করেছি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ আধুনিকায়ন করা হয়েছে,
পানির সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম ওয়াসায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে
চলেছে, নতুন নতুন স্কুল কলেজ হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ের ডাবল লাইন
হচ্ছে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা করা হয়েছে,
নার্সিং ট্রেনিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা
কৃষকদের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি,
প্রবাসীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রামের গ্যাস সমস্যা সমাধানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি
গঠনকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন হিসেবে
আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার
বন্দরনগরীতে আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ
বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। চট্টগ্রামে হবে গভীর সমুদ্রবন্দর।