পলোগ্রাউন্ডে জনসভায়
আওয়ামী লীগ নেতারা মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার
জন্য শেখ হাসিনাকে যেমন অভিনন্দন জানিয়েছেন, তেমনি সমালোচনা করেছে
বিএনপির।
১৪ দল আয়োজিত বুধবারের ওই জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত করার দাবিও উঠে
আসে বক্তাদের কণ্ঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও
আশ্বস্ত করেন, তার সরকার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের ছাড় দেবে
না। ১৪ দল আয়োজিত বুধবারের ওই জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত করার দাবিও উঠে
দেশের উন্নয়নের ধারা সচল রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে নির্বাচনে জয়ী করতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানান ১৪ দলের নেতারা।
বন্দরনগরীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বলেন, নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার যে কথা তিনি দিয়েছিলেন, তা রেখেছেন হাসিনা।
“শেখ হাসিনা বাপঅর বেটি; হথা যিয়্যান দে, ইয়্যান রাখে (বাপের বেটি শেখ হাসিনা। তিনি যা বলেন, তা রাখেন)। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করে নাই। নিজের রক্ত দিয়ে এ দেশ গড়েছিলেন। তার কন্যা কখনোই দেশের সঙ্গে বেঈমানি করবেন না,” নিজের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন তিনি।
চট্টগ্রামের আরেক সংসদ সদস্য, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “সমুদ্র বিজয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সমুদ্র পাড়ের মানুষের কাছে এসেছেন। এজন্যে সমুদ্র পাড়ের মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন।”
পলোগ্রাউন্ড মাঠে গত জানুয়ারিতে বিরোধী জোটের সমাবেশের তুলনায় ক্ষমতাসীন জোটের মহাসমাবেশে তিনগুণ বেশি জনসমাগম হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিএনপি ভাড়া করা লোক নিয়ে সমাবেশ করেছিল।”
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দীপু মনি, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে চট্টগ্রামবাসী সবসময় শেখ হাসিনার পাশে থাকবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারীদের প্রতিরোধের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই থেকে অর্থ ‘নেওয়ার’ দিকে ইঙ্গিত করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “আপনারা খবর পাইছেন? খালেদা জিয়া ধরা খাইছে। পাকিস্তানের লাখ নয়, কোটি টাকা ঘরে নিয়ে এসেছিল।”
চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং চট্টগ্রাম-ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট রেলপথ উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত জানান, কর্ণফুলীর ওপর দিয়ে কক্সবাজার, রামু হয়ে মিয়নমার পর্যন্ত রেল লাইন হবে।
চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ঘোষণার পাশাপাশি আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনকে আধুনিক করা হবে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “১৯৭৪ সালে প্রথম জাতির পিতার নেতৃত্বে সমুদ্রসীমা বিষয়ে আইন পেয়েছিল দেশ। এরপর কোনো সরকার তা মেনে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ এগোতে চেষ্টা করেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তরিক হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যুগান্তকারী রায় পেয়েছে।”
হাসানুল হক ইনুও সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জেতার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে বলেন, “৭১ সালে বঙ্গবন্ধু মানুষকে একটা দেশ উপহার দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা আরেকটি সমুদ্রদেশ উপহার দিয়েছেন।”
রাশেদ খান মেনন বলেন, “বিএনপি যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে রক্ষা করতে চায়। তারা নির্বাচনের কথা বলবেন, তা তাদের মুখে মানায় না। এর আগে তারা ভুয়া ভোটার তালিকা করে দেশকে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের হাতে তুলে দিয়েছিল।”
চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “চারদলীয় জোট সরকারের সময় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল, অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল।”
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমিন, সংসদ সদস্য চেমন আরা তৈয়ব, হাসিনা মান্নান, নুরুল ইসলাম বিএসসি, মইনুদ্দিন খান বাদল, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, গণতন্ত্রী পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম প্রমুখ।