মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১২

বিতর্কিত এসআই রুহুল আমিনকে পূনরায় রামু থানায় ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় চলছে !

॥ রামু নিউজ রিপোর্ট ॥ 
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বিতর্কিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন কর্তৃক সংখ্যালঘু পরিবারের গৃহবধূকে নির্যাতনের আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে-পড়ে লেগেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার হওয়া বিতর্কিত ওই উপ-পরিদর্শক কে পূনরায় রামু থানায় নিয়ে আসার জন্য নানা তালবাহানা চলছে। প্রত্যাহারের পরও প্রতিদিন উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন প্রতি নিয়ত থানা কম্পাউন্ড সহ রামুর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করায় রামুর সচেতন মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ১১ র্মাচ দুপুরে চুরির মামলায় অভিযুক্ত রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপী গ্রামের রোজেন বড়ুয়াকে ধরার জন্য বাড়িতে যান রামু থানার উপপরিদর্শক রুহুল আমিন। এসময় উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিন শয়ন কে ঢুকে তাঁর স্ত্রী বিপু বড়ুয়ার (২৪) কাছে স্বামীর জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি চান। না দেওয়ায় তাকে নির্মমভাবে পেটান এবং  গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে ওই গৃহবধুর হাত ও পিঠে আঘাত পান। পরদিন (১২ মার্চ) ঘটনার তদন্তে মারধরের সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে নানা কৌশলে ওই বিতর্কিত দারোগাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রামু থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী জানান, পুলিশ থানার নিয়মিত কিছু দালাল শ্রেণির লোকজনকে ব্যবহার করে এবং এদের স্বাক্ষী বানিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া টাকার বিনিময়ে ওই গ্রামের বিভিন্ন নারী-পুরুষকে থানায় নিয়ে পুলিশের পে স্বাী বানাচ্ছে। থানা থেকে লোকজন এসে গাড়িতে করে এসব লোকজন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্বাক্ষী দাতাদের মধ্যে বেশীরভাগ ওই পরিবারের সাথে পূর্ববিরোধ আছে এরকম লোক। এমনকি ঘটনার দিন রামুতে ছিলেননা এ রকম লোকজনকেও স্বাী বানানো হয়েছে। এ দিকে গত বুধবার (১৪ মার্চ) গভীররাতে নির্যাতিত গৃহবধূ বিপু বড়ুয়ার বাপের বাড়িতে পুলিশ যাওয়ায় আবারও তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল ২০ মার্চ কক্সবাজার ও রামুতে কর্মরত কয়েকজন সংবাদকর্মী বিপু বড়ুয়ার বাড়িতে যান। এসময় বিপু বড়–য়া জানান, বর্তমানে তিনি খবই অসুস্থ। হাতের ও পিঠের ব্যথা কমেনি। টাকার অভাবে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, স্বামীর চুরির মামলা নিয়ে যা হবার তাই হবে, কিন্তু আমার উপর পুলিশী নির্যাতনের বিচার আমি দেখতে চাই। ‘স্বামীর মারধরে তিনি আহত হয়েছেন’ পুলিশের এমন প্রচারনা প্রসংঙ্গে জানতে চাইলেবিপু বড়ুয়া জানান, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রোজের (স্বামী) আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর থেকে কোন দিন সে আমাকে মারধর করেনি। ওই দিনের পুলিশী নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে বিপু বড়ুয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
বিপু বড়ুয়ার শ্বাশুড়ি জানান, পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি পুলিশের নানা হুমকী-ধমকির কারনে হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়েই তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। বাড়ির পাশের অনেক লোকজনের সাথে তাদের শক্রুতা রয়েছে। পুলিশ এমন লোকজনদের নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলে আমরাও পিছপা হব না। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব।
রামু উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, আসল ঘটনা ধামাচাপা না দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। প্রত্যাহার হওয়া উপ-পরিদর্শক রুহুল আমিনকে পূনরায় রামু থানায় নিয়োগ দেওয়া সমীচিন হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রামু উপজেলা বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্টের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তিনি বিষয়টি দেখেন। পরে ওই এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছেন। তিনি এটাকে মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লংঘন বলে উল্লেখ করেছেন এবং সংখ্যালঘু পরিবারের গৃহবধূ হওয়ায় পুলিশ এমন নির্যাতনের সাহস পেয়েছে বলে জানান। তিনি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য সোনিয়া বড়ুয়া জানান, নির্যাতনের পর দিন তিনি ওই গৃহবধূর বাড়িতে গেলে বিপু বড়ুয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা পুলিশের এসআই রুহুল আমিন কর্তৃক নির্যাতনের কথা জানান। তিনি জানান, একজন নির্দোষ মহিলার উপর পুলিশের এমন বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, পুলিশী নির্যাতনের বিষয়টি জানার জন্য (১৩ মার্চ) তিনি বিপু বড়ুয়ার বাড়িতে যান। ওই সময় তিনি বিপু বড়ুয়া ও  তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেড় ঘন্টা কথা বলেন। এতে পুলিশের এসআই রুহুল আমিন কর্তৃক বিপু বড়ুয়া ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারধরের নির্যাতনের বিষয়টি ফুটে উঠে।
প্রসঙ্গত, পুলিশের হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার নির্যাতিত গৃহবধু বিপু বড়ুয়া গত বুধবার পুলিশ সুপারের সাথে সাাত করে তার উপর পুলিশী নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখান। এ সময় তাঁরা নিরাপত্তার দাবি জানালে পুলিশ সুপার তাদের আশ্বস্থ করেন এবং এদের সামনেই মুঠোফোনে রামু থানার ওসিকে তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন।
ওই পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ সুপার নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিলেও থানার ওসি একে নজিবুল ইসলাম বুধবার (১৪ মার্চ) রাত বারটার দিকে বিপু বড়ুয়ার বাপের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে মারধরের ঘটনা সাজানো বলে দাবি করেন। এত রাতে বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার তাদের মধ্যেও ভীতির সৃষ্টি হয়।
তাঁরা আরও জানান, ওই পরিবারের গৃহকর্তা একজন রিক্সা চালক। বয়সের ভারে প্রতিদিন রিকসাও চালাতে পারেন না। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে নির্যাতিত গৃহবধূ বিপু বড়ুয়া তাঁর ছয় বছরের শিশু সন্তান নিয়ে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমনকি টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না।

এক সপ্তাহে ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দীর্ঘ ১১ মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু

মহসীন শেখ॥   দীর্ঘ এগার মাস পর কক্সবাজারে নকশা অনুমোদন দেয়া শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর ১২ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ...