॥ রামু নিউজ রিপোর্ট ॥
কক্সবাজার শহরের চাঞ্চল্যকর শিশু অপহরণ মামলার আসামী ও আন্তর্জাতিক নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের হোতা হাসানকে গতকাল রিমান্ডের পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত ২৩ মার্চ শহরের গোলদিঘী পাড়ের শিমুর ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশ হাসানকে ৪ দিনের পুলিশ রিম্যান্ডে
নিয়েছিলেন। অপরাধ জগতের অত্যন্ত সুচতুর হিসাবে পরিচিত হাসান রিম্যান্ডে পুলিশের কবল থেকে রক্ষার কৌশল হিসাবে আগে ভাগেই আদালতের মাধ্যমে নিজেকে ‘হৃদরোগী’ মর্মে একটি সার্টিফিকেট দিয়ে রেখেছিলেন। ওই সার্টিফিকেটের বলে হাসান রিম্যান্ডের ঝাঁকুনি থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছেন। এ কারনে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ্দ করে জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে হাসান কিছুই স্বীকার করেনা। তাকে গতকালই জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।ওদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুখ্যাত পাচারকারী দলের সর্দ্দার হাসানের অপরাধ জগতের আরো অনেক কাহিনী। হাসান বেশ ক’বছর আগেই পর্যটন শহর কক্সবাজারকে বেছে নেয় তার অপরাধ জগত বি¯ৃ—তির জন্য। প্রথমে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতেন। সেখানে থেকে পর্যটকদের তিনি ‘পতিতা’ সরবরাহ দিতেন। এ কারনে এলাকাবাসী তাকে মহল¬া থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর হাসান শহরের পেশকার পাড়ায় ভাড়া বাসায় উঠেন। সেখানে থেকেও পতিতা ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে মহল¬ার লোকজন গনধোলাই দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে শহরের গোলদিঘী পাড়ের ‘শাহীন সাহেবের বাসা’ হিসাবে পরিচিত একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তার গোপন ব্যবসা জমিয়ে তুলে। নানা স্থান থেকে সুন্দরি তরুনী সংগ্রহ করে হাসান তার ভাড়া বাসায় রাখত। সেখান থেকেই মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন নামী দামি হোটেলে পর্যটকদের নিকট তরুনিদের সরবরাহ করা হত। এ ছাড়াও হাসান নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের একজন বড়মাপের পাচারকারী। কক্সবাজার কেজি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর কিশোরী ছাত্রী আমেনা জুহিকে কে গত ৬ ফেব্র“য়ারি অপহরণ করে নিয়ে যাবার সময় তার কান্নাকাটিতে বাহারছড়া গোলচক্কর এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে তাকে নামিয়ে দেয়। পরবর্তীতে জুহির সনাক্ত মতেই পুলিশ গ্রেফতার করে হাসানকে। জানা গেছে, হাসান কক্সবাজারে আসার পর তার অপরাধজনক কাজ ঢাকা দেয়ার কৌশল হিসাবে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সাথে দহরম মহরম করতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। শিশু অপহরণকারী হাসানের ২ কন্যার একজন কক্সবাজার কেজি স্কুলের ছাত্রী বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর থেকে তার দশম শ্রেণীতে পড়–য়া কন্যাও স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তার আরেক কন্যাকে বিবাহ দেয়া হয়েছে। গোলদিঘীর পাড়ের বাসায় সুন্দরি তরুনিদের আনাগোনার পর বাসা ছেড়ে দেয়ার চাপ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসান (গ্রেফতারের আগে) তখন পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাসা ছেড়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অপহৃত কিশোরীর পিতা কায়সারুল ইসলাম জানান, তিনি যখন অপহরণের মামলা দিতে গিয়েছিলেন তখন কক্সবাজার মডেল থানার বিদায়ী ওসি মোঃ বদরুল আলম তালুকদার ‘হাসান একজন ভাল মানুষ’ হিসাবে সনদ দিয়ে মামলা নিতে গড়িমসিও করেছিলেন। কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দ্দেশে শেষ পর্যন্ত ওসি মামলা নিতে রাজি হয়েছিলেন।